বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সদকাতুল ফিতর রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করে

মাওলানা রফিকুল ইসলাম:
সদকাতুল ফিতর আর্থিক ইবাদত। এটি বিধানগত দিক থেকে ওয়াজিব। যা ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে আদায় করতে হয়। বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাসুল (সা.) দুটি উদ্দেশে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একটি উদ্দেশ্য হলো, অনেক সময় মানুষ রোজা রেখে কথা ও কাজে ভুল করে ফেলে। ভুল না করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ হিসেবে ভুল হয়ে যায়। এতে রোজা ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। আর রমজানের শেষে কিছু দান সদকা করলে সেই ত্রুটিবিচ্যুতি দূর হওয়ার আশা করা যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, সদকাতুল ফিতর প্রদান করে অভাবী গরিব-দুঃখীদের ঈদের আনন্দে অংশীদার করা। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল কথা ও অর্থহীন কাজ থেকে রমজানের রোজাকে পবিত্র করার জন্য এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য।’ -আবু দাউদ ১৬০৯

সদকাতুল ফিতরের নেসাব জাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। কারও কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। এমনকি রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। -ফাতহুল কাদির ২/২৮১

যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী নয় তাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব নয়। কিন্তু এরপরও যদি তারা ফিতরা আদায় করতে চায় তাহলে আদায় করতে পারবে। এতে তারা সওয়াবের অধিকারীও হবে।

জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদানের খাত একই। অর্থাৎ নির্ধারিত আটটি খাত, যা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। যাদের জাকাত দেওয়া যাবে তাদের সদকাতুল ফিতরও দেওয়া যাবে। কোরআনে বর্ণিত নির্ধারিত খাত ছাড়া অন্য কোনো কল্যাণমূলক কাজে সদকাতুল ফিতর প্রদান করলে শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ -সুরা তাওবা ৬০

ফিতরার পরিমাণ এখন প্রায় সব মুসলিম দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়। এটা অবশ্য ইসলামের নীতিমালার আলোকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। নীতিমালা হলো, গম বা আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ইত্যাদি পণ্যের যে কোনো একটি দ্বারা ফিতরা দেওয়া যাবে।

চলতি বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্র্তৃক এগুলোর বাজার মূল্যের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রতি সর্বনিম্ন ফিতরা ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৭০ টাকা।

গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (একশত পনেরো) টাকা দিতে হবে। যব দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৪০০ (চারশত) টাকা, কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২১৪৫ (দুই হাজার একশত পঁয়তাল্লিশ) টাকা, খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২৪৭৫ (দুই হাজার চারশত পঁচাত্তর) টাকা এবং পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২৯৭০ (দুই হাজার নয়শত সত্তর) টাকা ফিতরা দিতে হবে। মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উল্লিখিত পরিমাণ যেকোনো একটি পণ্য বা তার সমমূল্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।

ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। রাসুল (সা.) ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজের পর তা প্রদান করলে সাধারণ দানের অন্তর্ভুক্ত হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে সদকা আদায় করল, তাই গ্রহণযোগ্য সদকাতুল ফিতর। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নামাজের পর তা আদায় করল, তা সাধারণ দানের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হলো।’ -আবু দাউদ ১৬০৯

ঈদের কয়েকদিন আগেও ফিতরা প্রদান করার সুযোগ আছে। যদি আগে আগে ফিতরা প্রদান করা হয়, তাহলে গরিবরা এ থেকে কিছু মিষ্টান্ন জাতীয় জিনিস কিংবা একটু ভালো খাবার অথবা কিছু পোশাক পরিচ্ছদ সংগ্রহ করতে পারবে। রাসুল (সা.) ঈদের দুদিন আগে ফিতরা প্রদান করতে বলেছেন, হাদিসে এমন বর্ণনাও রয়েছে। -মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক সানআনি ৫৭৮৫

ফিতরা জাকাতেরই একটি প্রকার। জাকাত যেমন বিধিত হয়েছে ইসলামি আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনতে তেমনি সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করা হয়েছে ঈদের আনন্দে সমতা বজায় রাখতে। ঈদের দিনে দরিদ্ররা যেন ধনীর মতো আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং ঈদ যেন ধনী-গরিব সবার জন্য সমান হয়, এটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION